জ্বীন বনাম মাধ্যাকর্ষণ:মদিনার রহস্যময় জ্বীন পল্লীতে কি আছে?
প্রিয় পাঠক, আস্সালামু আলাইকুম।
স্বাগত জানাচ্ছি মদীনার বিশ্ময় পল্লী ওয়াদিয়ে জ্বীন বা জ্বীনের পল্লীতে।
মসজিদে নববী হতে প্রায় ৩৭ কিঃমিঃ দুরে এই জ্বীনের পল্লী অবস্থিত।
জ্বীনের পল্লীর সম্পুর্ণ HD ভিডিও দেখুন :
আগের দিন আমরা ভিজিট করেছি মক্কার জাদুঘর এবং আজ আমরা ভ্রমণ করছি ওয়াদিয়ে জ্বীন বা জ্বীনের পাহাড়।
আমরা যাচ্ছি ইনশাল্লাহ আপনাদের সেই অদ্ভুদ বিষয়টি দেখাব যেখানে মাধ্যকার্ষণ শক্তির বিপরীতে কাজ করে। অর্থাৎ কোন বস্তু উপর থেকে নীচে না গিয়ে নীচ থেকে উপরের দিকে যেতে থাকে।


ওয়াদিয়ে জীন যেতে আমরা সুন্দর রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আসলে পুরো মদিনা একটি পরিচ্ছন্ন শহর, যেন ছবির মত।শুধু হোটেল আর হোটেল।
আমরা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর শহর, হোটেলের শহর মদীনা মনোয়ারা হতে অনেকটাই দুরে যাচ্ছি, যাচ্ছি ওয়াদিয়ে জীন বা জীনের পল্লীতে। রাস্তার দুপাশে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। আর আছে সারি সারি খেজুর গাছ। আমি সিওর না এগুলো কি মদিনার বিখ্যাত “আজওয়া” খেজুর নাকি অন্য কোন জাতের।

যাহোক আমরা এগিয়ে যাচ্ছি জীনের পাহাড়ের দিকে। আমাদের ড্রাইভারের বয়স বেশ বেশী হলেও তার গাড়ির গতি ৯০-১১০ কিঃমিঃ এর মধ্যে উঠা নামা করছে।

আমার হাতের ব্যাগ দেখিয়ে তিনি মজা করে বল্লেন” ব্যাগ ভরে জ্বীন নিয়ে আসব” হা হা হা।

চারিদিকে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। আর পাহড়ের পাথর কোথাও কালো কোথাও লাল হয়ে আছে।

আসলে শতাব্দীর পর শতাব্দী এই পাহাড় রোদে পুড়ছে। কবি যেন যথার্থই বলেছেন:
”কখনও পাহাড় যেখানে পাথর
চিরদিন জেগে থাকে ……….. ”
একথা সৌদি আরবের জন্যই যেন লেখা।
যাহোক এগিয়ে যাচ্ছি জীনের পল্লীতে।
জীনের পল্লীতে যাওয়ার পথে আমরা মদীনা শহরের অন্যান জিনিস এবং শহরের বাইরের কিছু দৃশ্য দেখব ইনশাল্লাহ।

আমরা ঐতিহাসিক ওহুদ পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আপনারা জানেন ইসলামের ইতিহাসে সেই ওহুদ যুদ্ধের কথা যেখানে মুসলমানরা জিততে জিততে হেরে যায় এবং ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয় মুসলমানদের।

সময় বিকাল। পরিস্কার নীল আকাশ। কনকনে শীতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। পাহাড়ের পিছনের নীল আকাশ খুব সুন্দর লাগছে।

আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করছেন আমরা রাস্তার ডানপাশ দিয়ে যাচ্ছি যেটি সৌদির নিয়ম, বাংলাদেশের ঠিক বিপরীত।
দেখতে পাচ্ছেন এখানে বেশ দুম্বা/ভেড়া এবং ছাগলের সমাহার দেখা যাচ্ছে। এই এলাকায় গবাদি-পশুর হাট বসে এবং কেনা বেচা হয়। এই সুযোগে গাড়িতে বসেই আমরা দুম্বা, ভেড়া, ছাগল আর উট দেখছি।
যাওযার পথে অনেক পশু খাদ্য গুদাম চোখে পড়ছে। যেখানে থরে থরে সাজানো রয়েছে পশুখাদ্য, ঘাস। প্রসংগত, এই খাদ্যগুলিও বিদেশ হতে আমদানী করা হয়ে থাকে। এ কারনে পরিবহনের সুবিধার্থে ঘাশগুলিকে অনেকটা কেক সদৃশ করে প্যাকড করা হয়েছে, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন।

যাহোক, এগিয়ে যাচ্ছি ওয়াদিয়ে জীন বা জীনের পল্লীতে।
এখন কিন্তু আমরা মদীনা শহর হতে বেরিয়ে যাচ্ছি এবং এখান হতে মুলত গ্রাম এলাকা শুরু।
আরো একটা জিনিস লক্ষ্য করছি আমরা মদীনা হতে যতটা দুরে যাচ্ছি ততটাই নীচে নামছি। অর্থাৎ মদীনা হতে আমাদের গন্তব্য জীনের পল্লী অনেক নীচের দিকে অবস্থিত।
পাহাড় আর পাহাড়। আসলে সৌদিতে প্রায় সব রাস্তাই পাহাড় কেটে বা পাহাড়ের নীচ দিয়ে গেছে।

দেখতে পাচ্ছেন একটি সীর্ণকায় উট। আসলে আমাদের বাংলাদেশে যেমন একটা জীর্ণ-শীর্ণ গোড়ার সামান্য রাইড দিয়ে কিছু টাকা আয় করে এখানে এমনটা উট দিয়ে কেউ কেউ করে। এটা তেমনই।
যাহোক, অবশেষে চলে এলাম জীনের পল্লীতে।

আসলে আমি এধরনের বিষয় আগেও শুনেছি কিন্তু আমি দেখে বিশ্বাশ করতে চাই। তাই পানি ভর্তি বোতল ছেড়ে দিয়ে পরীক্ষা করছি। এবং দেখতে পাচ্ছেন আমরা যে উচু দিক হতে এসেছিলাম বোতলটি নীচু হতে সেই উচুদিকে গড়িয়ে যাচ্ছে। সত্যিই নীচু হতে উচুতে যাচ্ছে কেন যাচ্চে তা কেউ জানে না।

এখন লক্ষ করুন আমরা ফেরত যাচ্ছি এবং এখন কিন্তু সেই নীচ হতে উচু রাস্তার দিকে আমাদের গন্তব্য। এবং গাড়ি চলছে কোন ইঞ্জিন ষ্টার্ট ছাড়া।

লক্ষ্য করুন স্পষ্টতঃই গাড়ি উপরের দিকে উঠছে কোন শক্তি ছাড়া। এটাই জীনের পল্লীর কারিশমা।

যাহোক, আমরা এখন নীচু এলাকা হতে উচু এলাকার দিকে এগিয়ে যাচিছ গাড়ির কোন ইঞ্জিন শক্তি খরচ না করেই। এভাবে চলবে প্রায় ৩/৪ কিঃমিঃ। তারপর গাড়ি চলবে স্বাভাবিক গাড়ির শক্তিতে।
আল্লাহ হাফেজ