সহি উমরাহ গাইড|ওমরাহ করার নিয়ম| কিভাবে সহিশুদ্ধ ওমরাহ করবেন?

সহি উমরাহ গাইড|ওমরাহ করার নিয়ম| কিভাবে সহিশুদ্ধ ওমরাহ করবেন?

ভ্রমণ বাংলা 2 Comments

পার্ট – ১

উমরাহ গাইড ডাউনলোড করুন এখানে (ছোট পৃষ্ঠা)

উমরাহ গাইড ডাউনলোড করুন এখানে (বড় পৃষ্ঠা)

প্রথমে জেনে নিই ওমরাহ কি ধরনের এবাদত?

উত্তরঃ প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জীবনে একবার ওমরাহ করা সুন্নত

ওমরাহ’র ফরজ ২ টি :

ইহরাম বাধা/নিয়ত করা

        এবং

তাওয়াফ করা

ওমরাহ’র ওয়াজিব ২ টি :

সায়ি করা (সাফা-মারওয়া)

                এবং

হলক করা বা মাথা মুণ্ডন করা/চুল ছাটা বা ন্যাড়া হওয়া।

আপনি যদি উমরাহ করার জন্য মনস্থির করে থাকেন তাহলে কিছু বিষয় মেনে চলুন।

সুস্থ্য থাকার চেস্টা করবেন কারন আপনি একটা লম্বা সফরে যাচ্ছেন। তার চাপ সহ্য করার মত শারীরিক মানসিক সামর্থ্য থাকতে হবে।

প্রয়োজনীয় কাপড় চোপড় রেডি রাখুন। “অনেক সময় আছে করা যাবে” এমন না ভেবে প্রস্তুত করে ফেলুন।

প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড়ঃ

২ সেট ইহরামের কাপড়,

১ টা কাপড়ের বেল্ট,

২জোড়া সান্ডেল,

কম পক্ষে ২ টাপাজামা,

২ টা পাঞ্জাবী, 

২ টা গেঞ্জি, 

২টা টুপি,

২টা লুংগি, ও

১টা তোয়ালে।

তবে সাধারন প্যান্ট-শার্ট এবং ১টা পাগড়িও রাখা যেতে পারে। ভাল ১টা লাগেজ বা ট্রাভেলিং ব্যাগ। জুতা রাখার জন্য ছোট একটা ব্যাগ। 

তবে মহিলাদের ওমরাহ করার জন্য সালোয়ার কামিজ উত্তম।

প্রয়োজনীয় অর্থ কড়িও নিশ্চিত করুন।

  • একটা বিষয় বলি, সেটা হল আপনি হজ্জ্ব বা উমরাহ করতে গেলে সাথে স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। কারন আপনি যে কোন সময় যে কোন কাফেলায় যেতে পারলেও আপনার স্ত্রী কিন্তু তা পারবে না। অনেকেই প্রথমে একা হজ্জ্ব বা উমরাহ করে আসার পর বিষয়টি উপলব্ধি করেন। তবে হজ্জ্ব বা উমরাহ’র জন্য যেহেতু যথেষ্ট অর্থ দরকার হয় সে জন্য বিষয়টি আর্থিক সামর্থের সাথেও সংশ্লিষ্ট। 

ভিসা, পাসপোর্ট, হোটেল বুকিং নিজে করা বা এজেন্সির সহযোগীতা নেওয়া

প্রত্যেক নাগরিকের তার দেশের পাসপোর্ট তার অধিকার। আপনার পাসপোর্ট ও হজ্জ্ব/ওমরাহ করতে যাওয়ার আগে নিজেই তৈরী করে রাখতে পারেন। আবার কারও সহযোগীতা নিয়েও করতে পারেন।

passport for Umarah hazz

এর পর সৌদির ভিসা, বিমান টিকেট বুকিং, হোটেল বুকিং এবং সৌদিতে গিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা আপনি নিজে করতে পারেন আবার কোন হজ্জ/ওমরাহ/ট্রাভেলিং এজেন্সির মাধ্যমেও করতে পারেন। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার কারনে মানুষ সাধারনত এসব কাজ যথাসময়ে সঠিকভাবে করার জন্য এজেন্সির সহযোগীতা নিয়ে থাকে ।

মনে রাখবেন, আপনি কোন বিমানে যাচ্ছেন বিমানের সিট কোন লেভেলের/শ্রেণীর তার উপর যেমন আপনার উমরাহ’র খরচ কম বেশী হতে পারে তেমনি আপনি মক্কা/মদিনাতে কি ধরনের হোটেলে থাকবেন সেটার উপরও মোট খরচ কম বেশী হবে। স্বাভাবিক ভাবেই হেরেম শরীফের কাছের হোটেলগুলিতে চাপ একটু বেশী থাকে এবং একই মানের হোলেও হেরেম শরীফের কাছের হোটেলগুলির ভাড়া একটু বেশী হয়ে থাকে। এগুলো আপনি আপনার এজেন্সেীর সাথে বিস্তারিত আলাপ করে নিবেন।

Umrah Hazz Biman Agency
mde

ধরুন আপনি মক্কা/মদিনাতে একটি হোটেলের ১ রুমে ১ জন থাকবেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার খরচ বেশী আসবে; আবার একই রুমে যদি আপনি আরো ৩/৪ জনের সাথে শেয়ার করেন সেক্ষেত্রে আপনার খরচ অনেক কমে আসবে।

umrah hajj procedure in bangla
Luxury Hotels Near Haram Sharif

খাবার খরচ যদি এজেন্সি বহন করে তাহলে খাবারের মান নিয়ে আলোচনা করুন। তবে নিজে খাবার ম্যানেজ করে খাওয়াই উত্তম কারন এক্ষেত্রে আপনি আপনার ইচ্ছামত মেনু পছন্দ করতে পারবেন এবং সেটা সাশ্রয়ী হবে বলে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে।

  • মিকাতঃ

মিকাত একটা সীমারেখা বা বাউন্ডারি যে সীমা অতিক্রম করার আগে ইহরাম বাধতে হবে। যেমন বাংলাদেশ সহ দক্ষিন এশিয়ার দেশসমুহের মিকাত হল ইয়ালালাম পাহাড় যা অতিক্রম করার আগে আপনাকে অবশ্যই ইহরাম বাধতে হবে।অর্থাৎ বাংলাদেশ হতে যখন আপনি উমরাহ করতে যাবেন,তখন আপনি যদি আগে মক্কা পৌছান তবে আপনাকে উক্ত ইয়ালালাম পাহাড় সীমা অতিক্রমের আগেই ইহরামের কাপড় পরে, ২ রাকাত নামায পড়ে ইহরামের নিয়ত করতে হবে। ইহরাম বাধার পরে যেহেতু কিছু বিধি নিষেধ মানতে হয় তাই আপনি চাইলে ইহরামের কাপড় একটু আগে পরলেও ইহরাম বাধা বা নিয়ত একটু পরে করতে পারেন। তবে অবশ্যই মিকাত সীমা অতিক্রমের আগে নিয়ত করে নিতেহবে।

মিকাত কি কোাথায়
মদীনা হতে মক্কায় আসার সময় আমরা এই মসজিদে ইহরাম বাধি
এবং জোহরের সালাত আদায় করি

মদিনা থেকে ওমরা করতে আসলে মিকাত হবে জুলহুলায়ফা নামক স্থান। মদিনা হতে আসার সময় প্রায় সমস্ত বাস/গাড়ি একটা মসজিদে যাত্রা বিরতি করে যেখানে ইহরামের কাপড় পরা এবং ওজু করা এবং নামাজ পড়রা সুব্যবস্থা আছে। বাস, গাড়ি, বিমান বা রেল যে ভাবেই আসুন আগেই ইহরাম বাধার স্থান (মিকাত) জেনে আসুন।

অনেক ক্ষেত্রে বিমান কর্তৃপক্ষ মিকাত অতিক্রমের আগেই ইহরাম বাধার সতর্কতা সময় বলে দিয়ে থাকেন তবে তা সকল বিমান কর্তৃপক্ষ বলেন না, সুতরাং আপনাকে এ ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে।

এক্ষেত্রে আপনি কোন ধরনের ভুল করার ঝুকি না নিয়ে বাংলাদেশ হতে আগে মক্কা গমন করলে আপনি বাসা হতে বা বিমান বন্দর হতে ইহরাম বাধতে পারেন। আর যদি আগে মদিনায় গমন করেন তাহলে বাংলাদেশ হতে ইহরাম বাধার প্রয়োজন নাই। আপনি মদিনা সফর শেষ করে মক্কায় আসার সময় মদিনার হোটেল হতে ইহরাম বাধতে পারেন অথবা জুলহুলায়ফা অতিক্রমের সময় ওখানের কোন মসজিদে আপনি ইহরামের কাপড় পরে ইহরাম বাধবেন।

পার্ট – ২

কিভাবে ইহরাম বাধবেন/ইহরাম বাধার নিয়ম: (ইহরাম বাধা ওমরাহর ১টি ফরজ)

ক।       ইহরামের আগে অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হবেন। এগুলোর মধ্যে বিশেষ করে হাত ও পায়ের নক কাটা, গোফ ছেটে ছোট করা, বোগল সহ বিশেষ অংগের লোম পরিষ্কার করা এবং গোসল করা আবশ্যক।

খ)        ইহরামের কাপড়: পুরুষদের জন্য সেলাই বিহীন ২ টুকরা চাদর সদৃশ সাদা কাপড় যার পরনের কাপড়টা একটু ছোট আর গায়ের চাদরটা একটু বড় হতে পারে আবার সমানও হতে পারে। যে কোন রংয়ের কাপড় হতে পারে তবে সাদা হওয়াটা উত্তম।

মহিলাদের জন্য তাদের স্বাভাবিক পোষাকই যথেষ্ট তবে খেয়াল রাখতে হবে মহিলাদের কাপড়-চোপড়ে যেন কোন ধরনের চাকচিক্য প্রকাশ না পায়।ইহরামের কাপড় পরার ভিডিও দেখুন এখানে।

গ)        মিকাতের আগে ২ রাকাত নামায আদায় করে ইহরামের নিয়ত করা। নামায আদায় করা সুন্নত।

ঘ)        মনে রাখবেন, ইহরামের কাপড় পরলেই ইহরাম বাধা হয় না; কাপড় পরে নিয়ত করলে ইহরাম বাধা হয়।

ইহরামের নিয়্যাত :

এ প্রসঙ্গে হাদীসে আসছে: একদা মহিলা সাহাবী দুবায়া বিনতে যুবাইর (রাদিয়াল্লাহু আনহা) তিনি রাসুল (সাঃ) কে বললেন : আমি হজ্ব করতে চাই তবে রোগাক্রান্ত হয়ে যাওয়ার ভয় করছি, তখন রাসুল (সাঃ) তাকে বললেন :”হজ্ব করতে শুরু কর এবং শর্ত করে নাও এবং বলো যদি কোন বাধা দানকারী আমাকে বাধা দেয়, তাহলে যেখানে আমি বাধাগ্রস্থ হবো সেখানেই আমি হালাল হয়ে যাবো” – বুখারী ও মুসলিম।

কাবা শরীফে প্রবেশের দোয়া
কাবা শরীফ

ঙ)        ইহরাম বাধার পর হতে হেরম শরীফ দেখা পর্যন্ত পুরুষরা উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করতে হয়। মহিলারা আস্তে আস্তে তালবিয়া পাঠ করবেন।

তালবিয়া:  “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক

                        লাব্বাইকা লা-শরিকালাকা লাব্বাইকা

                        ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিমাতা লাকাওয়ালমুলক

                        লা-শরিকালাক”।

অর্থাৎ, “উমরাহের জন্য আমি তোমার দরবারে হাজির। হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে হাজির, আমি তোমার দ্বারে উপস্থিত, তোমার কোন অংশীদার নেই, তোমার দরবারে উপস্থিত হয়েছি। সর্বপ্রকার প্রশংসা ও নেয়ামতের সামগ্রী সবই তোমার, তোমারই রাজত্ব, তোমার কোন অংশীদার নেই।”

ইহরাম বাধা অবস্থায় কিছু বিধি নিষেধ মেনে চলতে হয়ঃ

ক)       পুরুষদের জন্য মাথার সাথে লেগে থাকে এমন কোন কাপড় (যেমন টুপি) পরবেন না, সেলাই করা কাপড় পরবেন না, পায়ের গোড়ালী ঢেকে যায় এমন জুতা ব্যবহার করবেন না । স্যান্ডেল পরা উত্তম।

খ)        মহিলারা বড় চাদর বা ওড়না দিয়ে পর্দা রক্ষা করবেন কিন্তু মুখমন্ডল ঢেকে রাখবেন না। হাত বা পা মোজা ব্যবহার করবেন না।

গ)        সকল প্রকার অশ্লীলতা, ঝগড়া-বিবাদ এবং গীবত না করা যাবে না। অর্থাৎ সকল প্রকার গোনাহর কাজ হতে বিরত থাকবেন।

ঙ)        সহবাস না করা, চুল, দাড়ী, নখ না কাটা, কোন জীব-জন্তু শীকার না করা, এমনকি শীকারীকে সাহায্যও করা যাবে না। মশা-মাছি ও মারা যাবে না। শরীরে বা কাপড়ে সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না।

পার্ট – ৩

তাওয়াফের প্রস্তুতি:

ইহরাম বাধার পর তালবিয়া পাঠ করতে করতে বিমান বা যে কোন পরিবহনে আপনি মক্কায় আপনার হোটেলে পৌছালেন। হোটেলে গিয়ে গোসল করে পাক-পবিত্র হবেন। এই সময় গোসল করা মোস্তাহাব। তবে গোসল না করলেও চলবে।

হো্টেল/বাসস্থান হতে অযু অবস্থায় তালবিয়া পাঠ করতে করতে কাবা শরীফের দিকে অগ্রসর হতে হতে যখন কাবা শরীফ দেখা যাবে তখন তালবিয়া পাঠ বন্ধ করতে হবে।

এ সময় মোনাজাতের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিকট দোয়া করবেন।

হেরেম শরীফে প্রবেশের নিয়ম ও দোয়া:

”বিসমিল্লাহ ওয়াস্সালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসুলিল্লাহ্। আউযু বিল্লাহিল আযিম ওয়া বিওয়াজহিহিল কারীম ওয়া সুলতানিহিল কাদিম। মিনাস শায়তানির রাজিম। আল্লাহুম্মাফতাহলি আবওয়াবা রাহমাতিক”।

অর্থাৎ, “আল্লাহর নামে, আর তার রাসুল (সাঃ) এর উপর দুরুদ পাঠ করছি, আমি বিতাড়িত শয়তান হতে মহান আল্লাহর কাছে তার সম্মানিত চেহারার, এবং তাঁর অনাদি ক্ষমতার ওসীলায় আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আল্লাহ তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দ্বারগুলো উন্মুক্ত করে দাও”

এই দোয়া পড়তে পড়তে ডান পা আগে দিয়ে হেরেম শরীফে প্রবেশ করবেন।

তাওয়াফঃ কিভাবে তাওয়াফ করবেন (তাওয়াফ ওমরার ২য় ফরজ)

হেরেম শরীফের ভিতর দিয়ে তাওয়াফের স্থানে পৌছাবেন। তাওয়াফের নিয়ত করবেন; উচ্চারন আবশ্যক নয় মনে মনে করলেই হবে। মূল কাবাঘরের চারটি কর্নারের এক কর্নারে হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর রয়েছে এবং সেই বরাবর একটি সবুজ বাতির সিগনাল বসানো আছে। হাজরে আসওয়াদ এ চুমু খেয়ে /হাত দিয়ে ছুয়ে”বিসমিল্লাহ আল্লাহু আববার (৩বার)” বলে তাওয়াফ শুরু করবেন। তবে ভিড়ের কারনে হাজরে আসওয়াদ ছোয়া সম্ভব না হলে হাজরে আসওয়াদ ও সবুজ বাতি বরাবর স্থান হতে ”বিসমিল্লাহ আল্লাহু আববার” বলে তাওয়াফ শুরু করতে হবে।

tawaf procedure
তীর চিহ্নিত স্থানে রয়েছে হাজর এ আসওয়াদ
এই সবুজ বাহি ও হাজর-এ আসওয়াদ রেখা হতে তাওয়াফ শুরু

কাবা শরীফ বামে রেখে তাওয়াফ করতে হবে। একটু এগিয়ে মাকামে ইব্রাহিম, তারপর আর একটু এুগয়ে গেলে হাতিম। (হাতিম কাবা শরীফের একটি বর্ধিত অংশ যা ৩টি ধাতব ফলক  দিয়ে চিহ্নিত) পাথর দিয়ে ঘেরা ডি বক্স আকৃতির স্থান যেখানে অবস্থান এবং নামায পড়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং সওয়াবের

হাতিম কাবা শরীফের অংশ
স্বেত পাথরের তৈরী ডিবক্স আকৃতির এই অংশ হল হাতিম

এভাবে তাওয়াফ করতে করতে এগিয়ে যেতে হবে। যেতে যেতে কাবা শরীফের আরেকটি কর্নার আসবে যার নাম রুকনে ইয়মেনী। সম্ভব হলে ”বিসমিল্লাহ আল্লাহু আববার” বলে রুকনে ইয়ামেনী স্পর্শ করবেন (চুমু খাবেন না) ভিড়ের কারনে স্পর্শ করা সম্ভব না হলে স্বাভাবিক ভাবে তাওয়াফ করতে থাকবেন। রুকনে ইয়ামানী হতে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত অতিক্রম করার সময় দোয়া করবেন। এটা দোয়া কবুলের স্থান। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতে হাসানাতাও ওয়াকিনা আজাবান্নার ওয়াআদ খিলনাল জান্নাতা মায়াল আবরার”

অর্থাৎ, হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে দুনিয়ার কল্যান দান করুন এবং আখিরাতেও কল্যান দান করুন। আর দোযখের অগ্নি থেকে আমাদের বাঁচান [সুরা আল-বাকারাহ: ২০১]

এই দোয়া পড়তেন। বৃত্তাকার পথে এগিয়ে গেলে যেখান হতে শুরু করা হয়েছিল সেখানে অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদ ও সবুজ বাতি বরাবর পৌছালে একপাক শেষ হবে।

মনে রাখবেন তাওয়াফ ও নামাজের আদব একই; শুধু তাওয়াফের সময় কথা বলা জায়েজ আছে।

এ জন্য তাওয়াফের সময় আদব রক্ষা করা খুবই জরুরী, কোন ধরনের ধাক্কাধাক্কি বা অন্য কেউ আপনার দ্বারা কষ্ট পায় এমন কাজ করা যাবে না। ছবি তোলা বা ক্যামেরা ব্যবহার না করা।

তবে তাওয়াফের সময় আপনি নিজের মত করে যে কোন নেক দোয়া করতে পারেন। খাস দিলে তওবা এবং ক্ষমা চাইবেন আল্লাহর কাছে।

পুরুষরা তাওয়াফের সময় এত্তেদা করবেন অর্থাৎ গায়ে জড়ানো কাপড় ডান বোগলের নিচ দিয়ে নিবেন (এমন করবেন শুধু তাওয়াফের সময়) তাওয়াফ এর ভিডিও দেখুন এখানে

কিভাবে এত্তেদা করতে হয়
পুরুষদের ইহরামের কাপড় বগলের নীচ দিয়ে এত্তেদা করতে হয়

এভাবে যেখান হতে তাওয়াফ শুরু করেছিলেন সেখানে ঘুরে আসলে এক পাক বা চক্কর হবে। এভাবে সাত চক্কর শেষ করলে একটা তাওয়াফ সম্পন্ন হয়। হাজরে আসওয়াদ (কাল পাথর) ও সবুজ বাতি বরাবর এসে হাজরে আসওয়াদ এ চুমু খাবেন, চুমু খাওয়া সম্ভব না হলে স্পর্শ করবেন স্পর্শ করা সম্ভব না হলে লাঠি জাতীয় কিছু দিয়ে স্পর্শ করনে এবং লঠিতে চুমু খাবেন; তাও সম্ভব না হলে হাজরে আসওয়াদ বরাবর হাত উঠিয়ে ”আল্লাহু আকবার বলে” পরের চক্বর শুরু করবেন। এভাবে সাত চক্কর এবং ৮ বার হাজরে আসওয়াদ এ চুমু খাওয়ার মাধ্যমে তাওয়াফ শেষ করবেন।

তাওয়াফের প্রথম ৩ চক্করে পুরুষরা রমল করবেন; রমল মানে দৌঁড়ানো। ভিড়ের কারনে দৌড়ানো সম্ভব না হলে দৌড়ানোর মত করে হাঁটবেন।

তাওয়াফ চলাকালীন কোন ওয়াক্তের নামাজের ইকামত হলে অবশ্যই নামায আদায় করতে হবে। এবং নামায শেষে যেখান হতে তাওয়াফ থামানো হয়েছিল ঠিক সেখান থেকে আবার তাওয়াফ শুরু করতে হবে।

চক্কর গননায় কোন ভুল বা সন্দেহ হলে, যেমন ৩ চক্কর না ৪ চক্কর এমন মনে হলে যেটা কম অর্থাৎ ৩ চক্কর গননা করে তাওয়াফ শেষ করতে হবে।

কাবা শরীফের একটি বর্ধিত অংশ (ডি-বক্স আকৃতির) যাকে হাতিম-ই-কাবা বলে; এই অংশের বাহির দিয়ে তাওয়াফ করতে হবে।

তবে হাতিম অংশের ভিতরের গুরুত্ব অনেক সম্ভব হলে সেখানে প্রবেশ করে নফল নামায আদায় করতে পারেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আবেগ আপ্লুত হয়ে অনেক মহিলা হাজীগণ হাজরে আসওয়াদ এ চুমু খাওয়া/ছোয়ার জন্য ধাক্কা ধাক্কিতে সামিল হন,এ বিষয়ে সাবধান থাকা উচিত।

৭ চক্করের সাথে তাওয়াফ শেষ করে মাকামে ইবরাহিমের পিছনে অথবা সেখানে সম্ভব না হলে কাবা শরীফের যে কোন স্থানে ২ রাকাত তাওয়াফের ওয়াজিব নামায আদায় করবেন।

তাওয়াফের ২ রাকআত ওয়াজিব নামাজ কোথায় পড়তে হয়
তাওয়াফের ২ রাকআত ওয়াজিব নামাজ

এই নামাজে প্রথম রাকাতে সুরা কাফিরুন (কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন………) এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা এখলাস (কুলহু আল্লাহু আহাদ………..) সুরা পড়বেন । এই সুরা মুখস্থ রাখার চেষ্টা করবেন; না পারলে যে কোন সুরা পাঠ করবেন।

তাওয়াফ এর বিস্তারিত ভিডিও এখানে

পার্ট -৪

সায়ি করা/কিভাবে সায়ি করবেন (এটি ওমরাহর১ম ওয়াজিব) :

তাওয়াফের পরপরই সায়ি করতে হয়। তাওয়াফ শেষ করে তাওয়াফের ২ রfকাত নামায পড়ে আপনি পাশের জমজম কুপের পানি খাবেন, হাত মুখ ও মাসেহ/ধৌত করতে পারেন। জমজমের পানি প্রথম বার দাঁড়িয়ে পান করা সুন্নত কিনতু এর পরে বসে পান করবেন।

জমজমের পানি পান করুন
তাওয়াফ শেষে ক্লান্তি দুর করার জন্য এখান থেকে জমজমের পানি পান করুন

ওই এলাকা (মাসা এলাকা বলে)-র নিকট দিয়ে সাফা-মারওয়া পাহাড়ে যেতে হয় সায়ি করার জন্য। মনে মনে সায়ি-র নিয়ত করে নিবেন

saafa pahar saafa hills
সায়ী শুরু সাফা পাহাড় থেকে
সাফা পাহাড় – সায়ী শুরু এখান থেকে
সাফা পাহাড় এলাকা
বুঝা কঠিন এটা সাফা পাহাড় এলাকা

সাফা পাহাড় হতে সায়ি শুরু করতে হয়। সাফা পাহাড়ে দাড়িয়ে কাবার দিকে মুখ করে বিভিন্ন দোয়া দ্বরুদপাঠ করতে করতে মারওয়া পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হবেন। ১ম চক্করের শুরুতে কাবার দিকে মুখ করে আল্লাহর বানী সুরা বাকারার ১৫৮ নং আয়াত হতে “ইন্নাচ্ছাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শা’আ-ইরিল্লাহ

অর্থাৎ, ”নিশ্চয়ই সাফা এবং মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমুহের অন্তর্গত” পড়বেন।

মারওয়া পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় সবুজ বাতি জালানো কিছু পথ থাকবে; পথের ঐ অংশ পুরুষরা দৌঁড়ে যাবেন কিন্তু মহিলারা স্বাভাবিক ভাবে অতিক্রম করবেন।

সায়ী চলাকালীন এই সবুজ বাতি এলাকায় পুরুষরা দৌড়ে যাবেন

সাফা পাহাড় হতে মারওয়া পাহাড়ে পৌচালে ১ চক্কর এবং মারওয়া হতে সাফা পৌছালে আরেক চক্কর হয়।মারওয়া পাহাড়ে পৌছে আবার দোয়া-দ্বরুদ পড়বেন। আবার মারওয়া পাহাড় হতে সাফা পাহাড়ে পৌছালে ১ সায়ি হয়; এভাবে সাফা হতে মারওয়া এবং মারওয়া থেকে সাফা আসা যাওয়া করলে মারওয়া প্রান্তে পৌছালে ৭ সায়ি সম্পন্ন হয়। এবং দোয়ার মাধ্যমে সায়ি শেষ হয়।

মনে রাখবেন ১ পাহাড় হতে আরেক পাহাড়ে গেলেই ১ চক্কর হয়।

সায়ি চলাকালীন কোন ওয়াক্তের নামাজের ইকামত হলে অবশ্যই নামায আদায় করতে হবে এবং নামায শেষে যেখান হতে সায়ি থামানো হয়েছিল ঠিক সেখান থেকে আবার সায়ী শুরু করতে হবে। সায়ী’র বিস্তারিত ভিডিও এখানে।

চুল কাটা বা মাথা মুন্ডানো বা ন্যাড়া হওয়া (এটি ওমরাহর জন্য ওয়াজিব) ঃ

সায়ী শেষে মাথার চুল পরিস্কার করতে হবে
এভাবে পুরো মাথার চুল পরিস্কার করতে হবে

সায়ি শেষ হলে আপনি বাসা/ঘরে/হোটেলে ‍ফেরার আগেই মাথার চুল কেটে ফেলবেন বা ন্যাড়া হয়ে নিবেন। চুল কাটেন বা মাথা মুন্ডান যাই করেন তা যেন সম্পুর্ণ মাথা হতে হয়। একটু একটু করে চুল কাটলে হবে না যা অনেকে করে। এটা ভুল।

এই মাথা মুন্ডানোর সাথে সাথেই আপনার ওমরাহর সকল কাজ শেষ হল।

আলহামদুলিল্লাহ।

আমি আপনাদের দোয়া প্রার্থী।

বিনীত

মোঃ নিক্তারা হোসেন