আমাদের সহকর্মী শাহাজাহাান ভাই। ওনার খুব ভ্রমণের বাতিক আছে সাথে রেজা ও মনির ভাইও কম যায় না। দেশের হেন কোন জায়গা নাই যেখানে তাদের তিনজনের পদচিহ্ন পড়ে নি। আমরা অতটা ঘুরতে পারি না। ইচ্ছা থাকলেও নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার কারনে সব সময় তাদের সফর সংগী হতে পারি না। আমার মত আরেক ফ্যামিলি শামীম এবং তার মিসেস।
যা হোক, শাহাজাহান ভাই’র প্রস্তাব আমার সবাই লুফে নিলাম এবার সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমনে যাব।
যে কথা সেই কাজ। আমরা আমাদের সবার পরিবারের ছুটিসহ অন্যান্য বিষয় আলাপ করে সিদ্ধান্ত হল আমরা ০৮ হতে ১০ ফেব্রুয়ারী সেন্ট মার্টিন ও ছেড়া দ্বীপ ভ্রমণ করব ইনশাল্লাহ।
আসলে ০৮ ফেব্রুয়ারী রাত ১২ টায় আমরা চট্টগ্রাম দামপাড়া হতে সৌদিয়া নন এসি গাড়িতে যাত্রা করি টেকনাফের উদ্দেশ্যে। আমাদের টিমে ছিল মোট ৫ পরিবার ১৭ সদস্য। চট্টগ্রাম হতে টেকনাফ সিট ভাড়া ৪০০ টাকা (নন এসি) তবে আপনি এসি বাসে যেতে চাইলে ভাড়া গুনতে হবে প্রতি সিট ১০০০-১২৫০ (এসি) টাকা।
অনলাইন বুকিং বাসের টিকেট
Greenlinebd.com
গ্রিন লাইন পরিবহন কাউন্টারের যোগাযোগ:
01730060004, 01970060004, 01730060071, 01730060072, 01730060073,
Shohoz.com ( Call Center -16374 বাসের টিকেটের জন্য প্রযোজ্য। )
Saintmartinparibahanbd.com ( Call Center 16460 বাসের টিকেটের জন্য প্রযোজ্য ) Hotline:01762691339-40
সেন্ট মার্টিন পরিবহন কাউন্টারের যোগাযোগ:
01762691339-40, 01762-691345
সৌদিয়া কোচের দামপাড়া, চট্টগ্রাম কাউন্টারের যোগাযোগ:
ফোনঃ 01919-654903, 031-28633399, 01919-654902, 031-2863455;
যাহোক, আমরা সবাই যার যার স্থান হতে যথাসময়ে দামপাড়া বাস কাউন্টারে উপস্থিত। সময়মত বাস ছেড়ে দিল। রাস্তায় কোন যানজট ছিল না বিধায় ভোর হওয়ার কিছুটা আগেই আমরা পৌছে যাই টেকনাফে।
যেহেতু অন্ধকার ছিল এবং জাহাজ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছাড়বে সকাল ৯ টায় তাই আমরা আগেই টেকনাফ শহরের ‘‘প উ ষী” আবাসিক হোটেলে ৩টি রুম কয়েক ঘন্টার জন্য ভাড়া করে রাখি এবং সেখানে আমরা যাত্রা বিরতি করি। আমাদের সাথে থাকা মহিলা ও বাচ্চারা সহ সবাই ফ্রেশ হই। কয়েকজন টেকনাফ ঘাট এলাকায় ঘুরাঘুরি করি।

আমাদের রেজা ভাই এবং তার পরিবার যায় ঐতিহাসিক ”মার্টিন কুপ” (Martin Coup) দেখতে। এরপর সবাই একসাথে ”প উ ষী” এর নিচ তলার রেস্টুরেন্টে সকালের নাস্তা করি।

তারপর একটি মাইক্রোতে চড়ে আমরা যাই টেকনাফ জাহাজ ঘাটে।
অপেক্ষা করি জাহাজের জন্য এবং সময়মত উঠে পড়ি আমাদের জাহাজ “কেয়ারী কুরুজ এন্ড ডাইন” (Keari Cruise and Dine) এ।
এসি তে টিকেট করা ছিল। কেয়ারী কুরুজ এন্ড ডাইন” (Keari Cruise and Dine) জাহাজ এর টিকেট /ভাড়া টেকনাফ হতে সেন্টমার্টিন ১০০০-১৬০০ টাকা।
টেকনাফ হতে সেন্টমার্টিন যেতে জাহাজের টিকেটের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন :
Kearitourismbd.com , Launchbd.com
মোবাইলঃ 01811-418479, 01817-148735; 01817-048597;
গ্রীনলাইনঃ Greenlinebd.com
সবাই উঠে পড়লাম জাহাজে। জাহাজের এসি কম্পার্টমেন্ট বেশ সুসজ্জিত ও পরিপাটি। আছে খাবারের ব্যবস্থা, চা, কফি টিভি, কার্ড ও দাবা খেলার সরঞ্জাম। ওদের রং চা খুব ভাল তবে দাম প্রতিকাপ ৫০.০০ টাকা। টুরিষ্টদের জন্য আছে পত্রিকা।
স্বচ্ছ কাচে ঘেরা জাহাজের ভেতর থেকে নীল সাগরের প্রকৃতি উপভোগ করা যায়।

কিছুক্ষন পরে আমরা বেরিয়ে পড়লাম জাহাজ ও প্রকৃতি দেখার জন্য; আসলে খুব কম সময়ই আমরা জাহাজের ভিতর ছিলাম। সারাক্ষন শুধু ঘুরাঘুরি করছি আর উপভোগ করেছি নদী ও সাগরের নির্মল প্রকৃতি।
নাফ নদীর বুক চিরে আমরা ছুটে চলছি বঙ্গোপসাগর তথা সেন্ট মার্টিন এর দিকে। এই ফাকে একটি কথা না বল্লেই নয়। নাফ আসলে কিন্তু কোন নদী নয়, এটি বঙ্গোপসাগরের বর্ধিত অংশ মাত্র এবং এ কারনে এর পানি লবনাক্ত। ওপারে মায়ানমার এ পারে বাংলাদেশ।

হাসি আনন্দ আর সেলফি/ভিডিও উপভোগ করতে করতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সেন্ট মার্টিন এর দিকে।
এভাবে আমরা যখন সমুদ্রের বুক চিরে সেন্টমার্টিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম আমরা সমুদ্রের নীল পানি পরিষ্কার আকাশ এবং আশপাশের প্রকৃতি দেখে খুবই মুগ্ধ ছিলাম যা ভাষায় প্রকাশ করার নয় আমাদের সাথের বাচ্চারা তারা ছুটোছুটি করছিল জাহাজের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে আমরা তাদের নিরাপত্তার সাথে সেই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছি। ওরা ভিডিও করছিল সাথে সেলফি।

আর আমাদের জাহাজ কে অনুসরণ করা অসংখ্য সুন্দর সুন্দর সিগাল (গাঙচিল) আমাদের অনুসরণ করছিল এবং আমরাও তাদের সাথে দারুন মজা করছিলাম আমরা ওখানে চিপস এর প্যাকেট কিনে এবং সেখান থেকে একটা দুইটা করে সিগাল (গাঙচিল) দের দিকে ছুড়ে মারি এবং ওরা আনন্দের সাথে সেগুলি লুফে নিয়ে খাচ্ছিল আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি এই পাখিগুলো মানুষদের খুব ভালোবাসে এবং বিশ্বাস করে।
ওরা আমাদেরকে বিশ্বাস করে অনুসরণ করছিল এবং আমরা যে খাবার দিচ্ছিলাম সেগুলি তারা লুফে নিচ্ছিল। আমাদের দেওয়া খাবার গুলো নিতে তারা প্রায় আমাদের হাতের মধ্যে চলে আসছিল। মাত্র ১ ফুট দূরত্ব থেকে তারা আমাদের দেওয়া চিপস গুলো ঠোট দিয়ে লুফে নিচ্ছিল যা ছেলে বুড়ো সবাই খুব উপভোগ করছিলাম।
নীল জলরাশির বঙ্গোপসাগর, নাফ নদী এবং এলাকা উপভোগ করতে করতে কখন যে আমরা সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জাহাজ ঘাটে পৌঁছে গেছি বুঝতে পারেনি। যা হোক, আমরা লাগেজ-পত্র নিয়ে একে একে নেমে পড়লাম জাহাজ ঘাটে।

জাহাজ ঘাটে যখন আমরা পৌঁছালাম দেখি আমাদের আগে আরও দুইটি একই সাইজের জাহাজ ঘাটে নোঙ্গর করছে।
আমাদেরকে আগেই লেগে থাকা দুটি জাহাজের ভিতরের সরু রাস্তা দিয়ে পার হতে হচ্ছিল যা একটু কষ্টকর এবং বিপদজনক। সেজন্য আমি বলব এরকম ক্ষেত্রে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক হয়ে চলাফেরা করতে হবে অন্যথায় যে কোনো সময় যে কোনো দুর্ঘটনায় মানুষ আহত হতে পারে।

যা হোক, আমরা সঠিকভাবে জাহাজ থেকে নামলাম এবং জাহাজ ঘাট থেকে আমাদের আগেই বুকিং দিয়ে রাখা লাইট হাউজ রিসোর্ট খুব কাছেই ছিল তাই আমরা কোন গাড়ি ভাড়া না করে সবাই মিলে কিছুটা উত্তপ্ত বালুময় মাঠের ভেতর দিয়ে এগিয়ে গেলাম এবং মাত্র ৫-৭ মিনিট এর মধ্যে পৌঁছে গেলাম আমাদের আমাদের রিসোর্টে।
দেখলাম, ওদের সুসজ্জিত একটি বিশ্রামাগার রয়েছে। তো সেখানে আমরা বেশ কয়েকজন মিলে আমাদের মহিলা এবং শিশু সদস্যদের নিয়ে সময় কাটাচ্ছিলাম।

ওদিকে আমাদের শাহজাহান ভাই দেখতে গেলেন আমাদের জন্য প্রস্তুতকৃত রুমের অবস্থা। তো সম্পূর্ণ প্রস্তুত পেয়ে শাহজাহান ভাই আমাদের গ্রিন সিগন্যাল দিলেন এবং আমরা প্রবেশ করলাম যার যার জন্য নির্ধারিত রুমে।

আমার রুমের নাম ছিল দোলনচাঁপা, রোমান্টিক একটা নাম এবং পরিপাটি ছিল আমার খুব পছন্দ হয়েছে। পানি ও বিদ্যুতের সুন্দর ব্যবস্থা সেখানে আছে।
যা হোক আমরা আমাদের লাগেজ পত্র রুমে রাখলাম এবং লাঞ্চেল অর্ডার দিয়ে আমরা বের হলাম সেন্টমার্টিন ওয়েষ্ট বিচের দিকে।

আমরা যেহেতু পাঁচটি পরিবার ছিলাম এবং আমাদের সদস্য সংখ্যা ছিল ১৭ জন তাই পরিবারের সদস্য সংখ্যা হিসাবে আমাদের জন্য রুম বুকিং দেওয়া হয়েছিল যাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি তাদের জন্য ডাবল অথবা ট্রিপল বেডের রুম দেওয়া হয়েছিল আর যাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা কম তাদের জন্য সিঙ্গেল বা ডাবল রুম বুকিং করা হয়েছিল।
আমরা দ্রুত বেরিয়ে পড়লাম বাসা থেকে এবং পৌছে গেলাম সেন্টমার্টিনের ওয়েস্ট পয়েন্টে। ওখানে যেতে আমরা ভ্যান ভাড়া করলাম। ভ্যান ভাড়া ওখানে একটু বেশি বটে।পৌঁছে গেলাম সেন্টমার্টিনের ওয়েস্ট পয়েন্ট। ওখানে যাওয়ার রাস্তা তেমন একটা ভালো নয় তাই হেটে গেলেও খুব দ্রুত যাওয়া যায়।
সেন্টমার্টিনের ওয়েস্ট বিচে যে যার মত দৌড়াদৌড়ি, সাঁতার কাটা, লাফালাফি, সেলফি ভিডিও ইত্যাদিতে কেটে গেল।
ওখানে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে বিচ যথেষ্ট জনাকীর্ণ ছিল তবে সেটা বিরক্তিকর নয় এবং ওখানে নিরিবিলি বসে সময় কাটানোর জন্য বীস আমব্রেলা ছিল এবং বসার জন্য ছিল ইজি বেড।
আপনি চাইলে সেগুলি ব্যবহার করে রেস্ট করতে বা বিশ্রাম নিতে পারেন আমরা পানিতে নেমে সাঁতার কেটে পুরো সময় মজা করছিলাম এবং সমুদ্রের গর্জনের সাথে সাথে বড় বড় আছড়ে পড়া ঢেউ এ নিজেদেরকে ভাসিয়ে দিচ্ছিলাম। সবই ছিল দারুণ মজার এবং আনন্দের।
যাহোক আমাদের বিচের ঘোরাঘুরি ছবি তোলা সেলফি পর্ব শেষ হলো। ঘোরাঘুরি করলাম হুমায়ূন আহমেদ খ্যাত সমুদ্র বিলাসে। এটি সমুদ্রতীরের একদমই সাথে লাগোয়া। এরপরে আমরা ফিরে আসি আমাদের রিসোর্ট। কারন পেটে সবার ক্ষুধা।
রিসোর্টে এসে ফ্রেশ হই এবং ইতিমধ্যে আমাদের জন্য অর্ডারকৃত লাঞ্চ প্রস্তুত। সেরে ফেলি লাঞ্চ। বেশ সাধারণ খাবার খাই, সাদা ভাত মুরগির মাংস, ডাল এবং আলু ভর্তা। সত্যি বলতে কি আমাদের দীর্ঘ ভ্রমণ এবং সমুদ্রের পানিতে অবগাহন এর পরে আমরা যথেষ্ট ক্লান্ত-শ্রান্ত ছিলাম তাই আমাদের কাছে ওই সময়ে এই সাধারণ ডালভাত অমৃতের মত লাগে।
সেন্টমার্টিনের অধিকাংশ রিসোর্ট বা হোটেলে অন পেমেন্ট এ খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি চাইলে আপনার ইচ্ছামত মাছ মাংস বা অন্য কোন মেনু অর্ডার করতে পারেন। তারা আপনাকে ব্যবস্থা করে দিবে। এছাড়া আপনি আপনার লাঞ্চ মেনু কে যে কোন ভাবে কাস্টমাইজ করতে পারেন অর্ডার করতে পারেন সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ অথবা সাধারণ যেকোনো বাংলা খাবার।
এরপর লাঞ্চ সেরে আমরা ফিরে যাই যার যার রুমে এবং কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেই। আসলে বিশ্রামের সময় খুব কমই ছিল কারণ আমরা এখানে এসেছি ভ্রমণ করতে এবং সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই সেন্টমারটিন কে দেখতে। তাই আমরা বেশিক্ষণ রুমে বসে না থেকে আমরা সবাই একে একে বেরিয়ে পড়ি আমাদের রিসোর্টের খুবই সন্নিকটে সি বিচ দেখতে এবং তৎসংলগ্ন এলাকা ঘুরতে।

পড়ন্ত বিকেলে আমরা সমুদ্র তীরে হাঁটছি ঘুরছি এগুলি সবার কাছে ছিল খুবই আনন্দের এবং উপভোগ আমাদের সাথে যারা ভাবীরা ছিলেন তারাও। এগুলি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছে, মজা করেছে আমাদের সাথে বাচ্চা ছেলে মেয়েরা।
তো আগেই বলেছি লাইট হাউজ রিসোর্ট সেন্টমার্টিনের দক্ষিণ দিকে নৌবাহিনী অফিস সংলগ্ন এবং এর সাথেই রয়েছে সমুদ্রের তীর।
সেজন্য এই এলাকাটি খুবই উপভোগ্য ছিল এবং পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের আলোয় আমরা নানা রকম ছবি তুলেছি, সেলফি করেছি, ভিডিও করেছি প্রত্যেকটা ইভেন্ট ছিল খুবই উপভোগ্য এবং আনন্দদায়ক। এভাবে আমাদের প্রথম দিনের সেন্টমার্টিন ট্যুর সমাপ্ত করি এবং আমাদের রিসোর্টে ফিরে যায় যাই।
তবে রিসোর্টে সবাই ফিরে গেলেও আমাদের মহিলা সদস্য এবং শিশুদের রিসোর্টে রেখে আমরা একটু সান্ধ্যকালীন ঘুরাঘুরি করতে বেরিয়ে পড়ি। চলে যাই জাহাজ ঘাট সংলগ্ন বাজার এলাকায়।সেখানে আমরা দেখি হরেক রকমের মাছ, কাঁকড়া এবং অন্যান্য সামুদ্রিক খাদ্য।

আমরা সবাই পছন্দ করলাম যে আমরা আজ উপভোগ করব মচমচে ফ্লাইং ফিস। একটি রেস্টুরেন্টে ফ্লাইং ফিশ ফ্রাই করার অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করছিলাম তখন আমি দেখলাম অনেকেই কাঁকড়া ভাজি খাচ্ছে এবং তাদের খাওয়া দেখে মনে হচ্ছিল তারা এটি খুব মজা করেই খাচ্ছে। যদিও আমি কখনো কাঁকড়া ভাজি টেস্ট করি নাই।
তবে আমরা ফ্লাইং ফিস ফ্রাই করে খেলেও অন্যদের কিন্তু বাদ রাখেনি। আমাদের রিসোর্টে যে সমস্ত সদস্যরা ছিল তাদের জন্য আমার এই ফ্লাইং ফিশ ফ্রাই নিয়ে যাই এবং তারাও এটি খুব মজা করে খায়। এরপর আমাদের রাতের ইভেন্ট ছিল বারবিকিউ এবং সেটি ছিল কোরাল মাছের বারবিকিউ যা আসলে খুবই মজাদার ছিলো সবার কাছে।
আমরা যেহেতু আগের দিন রাত বারোটার গাড়িতে টেকনাফ রওনা হই, সেহেতু অনেকেরই ঘুমের ঘাটতি ছিল। এরপরে সারাদিন ঘোরাঘুরি করে আমরা সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। এদিকে বারবিকিউ তৈরি হচ্ছে কিন্তু বেশ সময় নিচ্ছে তাই আমাদের শিশুরা সহ বেশ কয়েকজন ঘুমিয়ে পড়ল।
কিন্তু আমরা কয়েকজন ব্যস্ত আছি বারবিকিউ কখন রেডি হবে এবং আমরা ডিনার করবো। এরপর প্রায় রাত ১২ টায় আমাদের বারবিকিউ রেডি এবং ডাক পড়ল ডিনারের জন্য।

বেশ কয়েকজন তাদের ঘুমের ঘাটতি এবং ডিনারে দেরি হওয়াতে রেগে গিয়েছিল। অবশেষে যখন আমরা বারবিকিউ প্রস্তুত করে সবার সামনে প্রেজেন্ট করলাম তখন বারবিকিউ ছাদে সবাই বিগলিত এবং আনন্দিত এটাই ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি যে আমরা আমাদের সমস্ত সদস্যদের মাঝে আনন্দ দিতে পেরেছি।
আর একটা বিষয় না বলে পারছি না সেটি হচ্ছে আমাদের টিমে ১৭ জন সদস্য থাকলেও আমাদের মধ্যে এমন কোন শিল্পী বা গায়ক ছিল না কিন্তু তাই বলে আমরা নাছ, গান পছন্দ করি না তা কিন্তু নয়। সৌভাগ্যবশত আমাদের রিসোর্টে একটি বড় টিম এসেছে যাদেরকে আমরা পরবর্তীতে জেনেছি তারা একটি নির্দিষ্ট অফিসের চাকরিজীবী এবং তারা শিল্পী এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে এসেছিল। তাদের গান আমরা খুবই উপভোগ করেছিলাম।
আরো উপভোগ করেছিলাম সমুদ্র তীরে তাদের ফানুস পোড়ানো।
এভাবে আমরা আমাদের সেন্টমার্টিনের দুই রাত দুই দিন এক রাতের ট্যুর এর প্রথম দিন এবং প্রথম রাত শেষ করি।

ভোরবেলা উঠে আমরা কয়েকজন বেরিয়ে পড়ি পায়ে হেঁটে পুরা সেন্টমারটিন ঘুরতে এবং সকাল বেলা সূর্যের আলোয় এক অপরূপ শোভায় শোভিত হয় সেন্টমার্টিন। সেই দৃশ্য উপভোগ করতে করতে আমরা আমাদের রিসোর্ট এলাকা হতে শুরু করে পশ্চিম দিকে হয়ে পু্রো সেন্টমার্টিন ঘুরে পুনরায় আমরা আসি আমাদের লাইট হাউজ রিসোর্টে। অনেকে অবশ্য বাইসাইকেল নিয়ে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করে থাকে ।

শুরু হলো দ্বিতীয় দিনের ভ্রমন। আজকে আমাদের গন্তব্য ছেড়া দ্বীপ যা সেন্ট মার্টিন এর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এবং আমি বলব এটি প্রধান আকর্ষণ কারণ আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে সেন্ট মার্টিন এর ছেড়া দ্বীপ।
তো সেজন্য আমরা আগেই একটি সাম্পান বুকিং করে রেখেছিলাম। তারপর আমরা সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে সবাই চলে গেলাম জাহাজ ঘাটে। আমরা যেখানে নেমেছিলাম সেখানেই বিপরীত পাশে সম্পান এবং স্পিড বোট ভাড়া পাওয়া যায়। আমরা একটি বড় শাম্পান ভাড়া নেই এবং যাত্রা শুরু করি ছেড়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে।
এখানে অবশ্য বলে রাখি আমাদের টিমে অন্যতম সিনিয়র সদস্য আমাদের শাহজাহান ভাই। উনার পরিবার ছেড়া দ্বীপ যাওয়া থেকে বিরত থাকেন কারণ ওনার ছোট বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তাই উনি তার চিকিৎসার জন্য থেকে যান সেন্টমার্টিনে। যাহোক, আমরা সাম্পানে করে রওনা হলাম সেন্টমার্টিন হতে ছেড়া দ্বীপে।
এখানে যাওয়ার পথে আমরা দেখেছি পরিষ্কার স্বচ্ছ পানির সাগর এবং সেখানে জীবিত ও মৃত অনেক প্রবাল এবং শৈবাল। আমাদের শাম্পন নৌকাটি বেশ বড় ছিল।
তাই এটি একেবারে ভুলে যাওয়া অর্থাৎ ছেড়া দ্বীপের ফুলে যাওয়া সম্ভব ছিল না তাই সেখানে এবং সাম্পান হতে ছোট ডিঙ্গি নৌকা তে আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় ছেড়া দ্বীপের ঘাটে এটিও আরেকটি মজাদার বিষয় ছিল আমরা যখন ছেড়া দ্বীপে নামতেছি তখন দেখেছি প্রায় 5 থেকে 10 ফুট গভীরে পরিষ্কার পানি এবং সেখানকার শ্যাওলা এবং দেখা যাচ্ছিল।

অবশেষে আমরা নেমে পড়লাম ছেড়া দ্বীপে এবং ঘোরাঘুরি করতে লাগলাম। সেখানে আমরা লক্ষ্য করেছি কোন স্থায়ী দোকানপাটে নেই এবং মাইকিং করা হচ্ছিল যে এখানে যেন কোন ধরনের ময়লা আবর্জনা ফেলা না হয়, কোন সামুদ্রিক জীব বৈচিত্রের আইটেম আমরা সংগ্রহ না করি এইখানে।
একটু বলে রাখি যে আসলে সেন্টমার্টিন এবং ছেঁড়া দ্বীপের প্রাকৃতিক বৈচিত্রকে অক্ষুন্ন রাখার জন্য আমাদের সকলের ঐকান্তিক চেষ্টা করা উচিত কারণ এতে প্রাকৃতিক বৈচিত্র ধরে রাখতে হলে তাকে প্রাকৃতিকভাবেই সংরক্ষণ করতে হবে এখানে যদি কোন ময়লা আবর্জনা পলিথিন রাসায়নিক সামগ্রী ফেলা হয় তা মারাক্তকভাবে এই এলাকার পরিবেশ দূষণের কারণ হবে।
প্রাকৃতিক বৈচিত্র ব্যাহত হবে যা মোটেই কাম্য নয়। সুতরাং আমি ব্যক্তিগতভাবে সবাইকে অনুরোধ করবো আপনারা যারা সেন্ট মার্টিন, ছেড়া দ্বীপ বা বাংলাদেশের যে কোনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থানে ভ্রমণের যান তাহলে সেখানকার পরিবেশ রক্ষায় আপনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন। এতে করে আমরা আমাদের দেশের এই সব অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদকে দীর্ঘ স্থায়িত্ব দিতে পারব।
হ্যাঁ ছেড়া দ্বীপে আমরা শুধুমাত্র দুই/একটি ডাব বিক্রেতাকে ওখানে অস্থায়ীভাবে বসে ডাব নারকেল বিক্রি করতে দেখেছি। আমরা আগেই জেনেছি ছেড়া দ্বীপের কচি ডাব এবং এর পানি খুবই সুমিষ্ট হয় তাই আমরা সবাই ছেড়া দ্বীপের ডাবের স্বাদ নিতে ভুল করিনি।
এভাবে আমরা সবাই ছেড়া দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফিরা করছিলাম উপভোগ করছিলাম নীল সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ এবং সাগরের সো সো শব্দ সবকিছু আমাদের কে যেন একটা ঘোরের মধ্যে নিয়ে গেছিল।
এরই মধ্যে আমরা টেলিফোন পাই যে আমাদের শাহজাহান ভাই যিনি তার ফ্যামিলি সহ সেন্টমার্টিনে থেকে গিয়েছিলেন সেই অসুস্থ বাচ্চা এখন অনেকটাই সুস্থ এবং উনি একটি স্পিডবোট নিয়ে ইতিমধ্যে ছেড়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। এটা শুনে আমরা সবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম। যাক বাবা বাচা গেল, সবাই সব কিছু উপভোগ করতে পারলাম অবশেষে।
ফাইনালি, আমরা ছেঁড়া দ্বীপ এর প্রকৃতি পরিবেশ উপভোগ শেষে আমরা আমাদের সাম্পানে এবং শাহজাহান ভাই স্পিডবোটে ফিরে আসলাম সেন্টমার্টিনের রিসোর্টে এবং যেহেতু আমাদের ফিরতি জাহাজ বিকাল ৩ টায় তাই আমরা রিসোর্টে ফিরে দ্রুত ফ্রেশ হলাম এবং লাঞ্চ সেরে সবাই যার যার মালামাল গুছিয়ে ফ্যামিলি নিয়ে এসে পড়লাম সেন্টমার্টিনের জাহাজ ঘাটে এবং যথারীতি আগে থেকেই বুকিং দেওয়া জাহাজে উঠে পড়লাম।
এভাবেই সমাপ্ত হল আমাদের দুই দিন এক রাতের আনন্দঘন সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ।
– অশেষ ধন্যবাদ যারা আমার এই লেখায় চোখ বুলিয়েছেন।
Facebook Page : Travel 2 LIfe
Twitter : Travel 2 LIfe
[FinalTilesGallery id=’2′]