
আপনি বিশ্বাস করেন আর নাই করেন এয়ারলাইনস হতে যে সমস্ত কাগজের বোর্ডিং পাস দেয় যাত্রীদের কাছে তা কিন্তু কেবল বিমানেস সিট খোজার টিকেট নয় বরং আরো বেশী কিছু যা মানুষের মনের মনিকোঠায় রক্ষিত থাকে অনেক অনেক দিন।
চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো আপানার জীবনে ব্যবহৃত ভিসা, ও বোর্ডিং পাসগুলো কি ফেলে দিয়েছেন নাকি আলমারির অতি যত্নে রাখার জিনিসপত্রের সাথে রেখেছেন ভালবাসার, আবেগের আর মহামূল্যবান স্মৃতির। একটু থেমে দেখার মত নস্টালজিক এক বুকমার্ক।

২০২৩ সালের শুরুর দিকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এয়ারলাইন্স এমিরেটস ঘোষনা করেছে তারা প্রাথমিকভাবে কিছু যাত্রীর কাগুজে বোর্ডিং কার্ড এর পরিবর্তে ডিজিটাল পাস নিয়ে আসবে। আর এমিরেটস এয়ারলাইনস এর দেখাদেখি অন্যান্য এয়ারলাইনসগুলো একই পথ অনুসরন করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এটি কাগুজে বোর্ডিং পাসের শেষের শুরু কিনা তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে এমন শঙ্কার মধ্যেই সিএনএন-এর কাছে অনেক পাঠকই লিখেছেন, কেন তারা পুরনো বোর্ডিং পাস সংরক্ষণ করেন। সেগুলোর পেছনের গল্পও তারা জানিয়েছেন।
আসুন দেখা যাক সিএনএন (CNN) গবেষণায় কয়েক দশক ধরে কাগজের বোর্ডিং পাসের ধরন কিভাবে পরিবর্তন হয়েছে জেনে নিই।

যাত্রীর পরিচয় সম্বলিত তথ্য যেমন, ফ্লাইট নম্বর, যাত্রীর নাম, এবং বিমান বন্দরের কোড লেখা থাকত ফ্লাইট জ্যাকেটের উপর। ”তখন বিমানের সিট পূর্বে নির্ধারণ করা থাকত না তাই যাত্রীরা বিমানে উঠে যে কোন একটি আসন বেছে নিতেন” – বিমান ইতিহাসবিদ David H. Stringer.
১৯৬০এর দশকের আসন নির্ধারণ ও স্টিকি ট্যাগ পদ্ধতিঃ
এ সময়ে বড় বড় বিমান যুক্ত হতে থাকে এয়ারলাইন গুলোতে। David Stringer বলেন এ সময়েই আসন নির্ধারণ শুরু হয়। সিটগুলোর চার্টে স্টিকি ট্যাগ থাকত। যাত্রীরা সিট গ্রহন করার পর ঐ সিটের স্টিকি ট্যাগ উঠিয়ে টিকেট জ্যাকেটে লাগিয়ে দেওয়া হতো।

১৯৬০ এর দশকের পৃথক বোর্ডিং পাসঃ
এ যুগে বোর্ডিং পাস আরো সংক্ষিপ্ত হয়ে আসে। টিকেট জ্যাকেট বাদ দিয়ে শুধু বোডিং পাশ দেওয়া হত যার থাকত দুটি অংশ। বিমানে ওঠার সময় বিমান বালারা ছোট অংশটি কেটে নিয়ে নিতেন।

১৯৭০ এর দশকের কম্পিউটার প্রিন্টেড বোর্ডিং পাসঃ
সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্স এর প্লাস্টিকের বোর্ডিং পাসঃ
সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন অন্যদের থেকে আলাদা প্লাস্টিকের তৈরি বোর্ডিং পাস দিত যাত্রীদের। সুতরাং আসন নাম্বার প্রিন্ট করার প্রয়োজন ছিল না । যাত্রীরা বিমানে প্রবেশ করার সময় বোর্ডিং পাস নিয়ে নেওয়া হতো।

২০০১ সালে টুইন টাওয়ার হামলার পর বিমান ব্যবস্থাপনায আসে ব্যাপক পরিবর্তন। ফলে অধিকতর নিরাপত্তার কারণে সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইনকে ধীরে ধীরে তাদের প্লাস্টিকের বোর্ডিং পাস বন্ধ করে দিতে হয়।
১৯৮০এর দশকের একই কাগজে টিকেট ও বোর্ডিং পাস
১৯৮৩ সালে টিকেটের পিছনে ম্যাগনেটিক স্ট্রাইপ লাগানো থাকত যাতে লিপিবদ্ধ ইলেকট্রনিক তথ্য টিকেট ও বোর্ডিং পাশ উভয়ের কাজ করত।

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) এর তথ্য অনুযায়ী ম্যাগনেটিক স্ট্রাইপ বোর্ডিং পাসের জন্য বিমানবন্দরে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় প্রিন্ট করতে হতে।
১৯৯০এর দশকে আসে বার কোড
১৯৯০ এর দশকে একমাত্রিক এবং ২০০৫ সালে দ্বি-মাত্রিক বারকোড সম্বলিত বোডিং পাস আসে।

১৯৯০এর দশকে চালু হয় ই-টিকেটিং ও অনলাইন চেক-ইন
আইএটিএ ১৯৯৪ সালে চালু হওয়া ই-টিকেট এর মানদন্ড ঠিক করে দেয় ১৯৯৭ সালে। তবে শতভাগ ই-টিকেটিং চালু হয় ২০০৮ সালে।

বিশ্লেষক হার্টভেল্ট এর মতে দীর্ঘদিন ধরে বোর্ডিং পাসের আকার টিকেটের সমান থাকলেও ঘরের প্রিন্টারের জন্য উপযুক্ত করতে পরে ডিজাইনে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
একবিংশ শতাব্দীর বোর্ডিং পাস যা কাগজ বিহীন
এয়ারলাইনগুলো মোবাইলের মাধ্যমে চেক-ইন করার কাজ শুরু করে ২০০৮ সালে এবং এ থেকেই শুরু হয় পেপারলেস বোর্ডিং পাস।

জুনিপার রিসার্চ দিচ্ছে আরো চমকপ্রদ খবর, আর তা হলো ২০২৩ সালে সাড়ে ৪ বিলিয়নের বেশি বোর্ডিং কার্ড ইস্যু হতে পারে যার ৫৩% হবে মোবাইলে। আর ২০২৭ সালে তা ৭৫% এ গিয়ে দাঁড়াবে বলে তাদের ধারনা।
নিকট ভবিষ্যতে কি আসছে?
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এয়ারলাইন্স এমিরেটস ঘোষনা করেছে তারা প্রাথমিকভাবে কিছু যাত্রীর কাগুজে বোর্ডিং কার্ড এর পরিবর্তে ডিজিটাল পাস নিয়ে আসবে। আর এমিরেটস এয়ারলাইনস এর দেখাদেখি অন্যান্য এয়ারলাইনসগুলো একই পথ অনুসরন করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তাহলে এটাই কি কাগুজে বোর্ডিং পাসের শেষের শুরু?
সময়ের পরিক্রমায় এর ভবিষ্যতের হাতে।
সিএনএন এর অনেক পাঠক বোর্ডিং পাস জমানো এবং তার পেছনের গল্পের কথা তুলে ধরেন।



